প্রথমেই বলে নেই। এই পোস্টে ধর্মীয় অংশটা বাদ রেখেছি ইচ্ছা করে। ওমরা করার নিয়ম, আদব এগুলো শিখানোর সঠিক মানুষ আমি না। ইন্টারনেটে অনেক জ্ঞানী মানুষের কনটেন্ট আছে এই ব্যাপারে। সেখান থেকে শিখলে অনেক বেটার শিখতে পারবেন। আমি শুধু জার্নি, থাকা খাওয়া এইগুলা নিয়ে কথা বলবো।
যাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করলে আল্লাহ নারাজ হবেন তারা হচ্ছে  ছোট ভাই ইজাজ মাহমুদ (শেয়ারট্রিপের) । নিজের আপন ভাইয়ের মত প্রতিটা বিষয়ে হেল্প করছে। এমনকি আসার সময় ফ্লাইট মিস করে যখন ছয়জন মানুষ একটা ছোটবাচ্চা নিয়ে দিশেহারা হয়ে ছিলাম, তখনও অনেক হেল্প করছে। আরেকজন হচ্ছে মক্কার সাইফউদ্দিন নওশাদ ভাই। উনি না থাকলে আমার মক্কায় গিয়ে প্রথমদিন রাস্তায় কাটানো লাগতো। উনি নিজের আপন ভাইয়ের মত আমার সুবিধা অসুবিধার খোজ নিয়েছেন, দিন রাত আমার বিভিন্ন কুয়েরীর উত্তর দিয়েছেন আর নিজের বাসায় এক বেলা ইফতার করেছেন। জাজাকা্‌ল্লাহ খাইরান।
ওমরার রিচুয়াল কমপ্লিট করতে ম্যক্সিমাম ৫ ঘন্টা লাগতে পারে। আমি দশদিনের জন্য গিয়েছিলাম মক্কায় থাকবো, কয়েকদিন রোজা করবো, ঘুরে দেখবো এজন্য। তবে শুধু ওমরা করতে চাইলে একদিনের বেশী সময় লাগেনা সব মিলায়ে।

ওমরায় যাওয়ার উদ্যোগটা শুরু হলো আম্মুর কাছে থেকে। আম্মুর অনেকদিনের ইচ্ছা কাবাঘর দেখতে মক্কায় যাবে। প্রথমে প্লান ছিলো আমি আর আম্মু যাবো, এর মধ্যে আমার মেয়ে জন্মগ্রহন করলো, প্লান করলাম মেয়ের ছয় মাস বয়স হলে মেয়েকে সাথে নিয়ে সপরিবারে যাবো। সাথে আমার শ্বশুর শ্বাশুরী আর শালাও যোগ হয়ে হয়ে গেলাম আমার ইনফ্যান্ট মেয়ে সহ সাত জন। যেকোন যায়গায় বেশী মানুষ হলে যাওয়ার আনন্দটা বেশী হয়। মেয়ের পাসপোর্ট বানাতে দিলাম। আর সাথে ভাবলাম কোন একটা ওমরা প্যাকেজ নিয়ে নেই।

প্যাকেজ ব্যাপারটা আসলে খারাপ না। **ঝামেনা এড়াতে চাইলে প্যাকেজ নিতে পারেন**। আমার সমস্যা হলো আমি এর আগে যতবার বিদেশ গেছি পুরা জিনিসটা নিজে করে গেছি। প্যাকেজ জিনিসটার সাথে কমফোর্টেবল না। আর ভাবলাম সাতজন যেহেতু, নিজে নিজেই যাই। যেই কথা সেই কাজ, নিজে নিজেই সবকিছু করে গেলাম। আর সেটার কথাই এই পোস্টে শেয়ার করবো।

পুর্বপ্রস্তুতি:

মুরব্বি, শিশু অথবা ক্রনিক ডিজিজ আছে এমন কেও গেলে ডাক্তার দেখায়ে চেক আপ করায়ে নিবেন অবশ্যই। ডাক্তারকে ওমরার কথা জানান। আর কয়দিন অন্তত ৫-৬ কিলোমিটার হাটার প্রাকটিস করেন। ঘরের ভিতরে খালি পায়ে হাটেন কিছুক্ষন। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান। আর ইমিউনিটি বাড়ানোর ট্রাই করেন। নিয়মিত ঘুমান।

ওমরাতে যেমন পরিশ্রম আছে তেমনি মক্কার আবহাওয়া আমাদের দেশের মত না। অনেকেই অসুস্থ হয়ে যায়। তাই পুর্বপ্রস্তুতি নেয়া ভালো। বাকিটা আল্লাহর হাতে।

পুরুষ যারা যাচ্ছেন, ইহরামের কাপড় প্রথমে সামলানো কঠিন মনে হতে পারে। কয়েকবার ট্রাই করেন। বাসায় পড়ে হেটে বেড়ান, দৌড়ান। কয়েকদিন ইহরামের কাপড় পড়ে বাসায় নামাজ পড়েন। আল্লাহ সহজ করে দিবে। আমি শেষের দিকে এমন কমফোর্টেবল হয়ে গেছিলাম, মনে হচ্ছিলো সারাদিন এইটা পড়েই ঘুরি। দারাজ থেকে একটা বেল্ট ব্যাগ নিতে পারেন। ফোন, পাসপোর্ট আর প্রয়োজনীয় জিনিসও রাখা যাবে আবার ইহরামের কনফিডেন্সও বাড়বে।

এয়ার টিকেট:

এয়ার টিকেট হাতে একটু সময় নিয়ে করা ভালো। আমি আমার  যাত্রার প্রায় দেড় মাস আগে টিকেট করেছিলাম শেয়ারট্রিপ থেকে। টাকা ছয়জনের জন্য দিতে হয়েছে আর আমার মেয়ের জন্য শুধু নয় হাজার টাকার মত একটা ফি দিতে হয়েছে,  বাচ্চার ফুল টিকিটের টাকা লাগেনি। এয়ার টিকেটের এক্সপিরিয়েন্স শেয়ারট্রিপে চমতকার। সাথে ছোট ভাই ইজাজের বিনয়ী সার্ভিসের কারনে কখনো অন্য কোথাও থেকে টিকেট করার দরকার হয়নি। পুরা প্রোসেস শেষ হতে লাগছে দশ মিনিট। টিকেট করেছিলাম সৌদি আরব এয়ারলাইন্সে। যেহেতু টিকেটের দাম ডেট ভেদে ভ্যারি করে, আপনারা বরং শেয়ারট্রিপে সার্চ দিয়ে দামটা দেখে নিয়েন। টিকেট করার সময় অবশ্যই উল্লেখ করবেন উমরার কথা।

আমি সৌদি আরব এয়ারলাইন্স এর টিকেট করেছিলাম। তবে নেক্সট টাইম আর সৌদি এয়ারলাইন্সে যাবো না। এয়ারলাইন, সার্ভিস খারাপ না। তবে আমার ভালো লাগে নাই।

ভিসা:

যদিও ব্যাপারটা অবভিয়াস তারপরেও যেহেতু অনেকে জিজ্ঞেস করেছে তাই লিখা, বাচ্চার বয়স এক দিন হলেও বিদেশ ট্রাভেল করতে পাসপোর্ট লাগে। বাচ্চাদের পাসপোর্ট করা রিলেটিভলি সহজও।

ভিসা করার সময় ভয়ে ভয়ে ছিলাম। অনেকে বলতেছিলো ছোট বাচ্চাদের ওমরা ভিসা দেয়না। কথাটা আসলে এমন না। বারো বছরের কম বয়স হলে বাচ্চাদের গার্ডিয়ানের সাথে আসতে হয়। আমি ভিসা করতে দিয়েছিলাম শেয়ারট্রিপে। এবং আমি এদেরকে ভিসার জন্য রিকোমেন্ড করবো না। একেবারেই না। এয়ার টিকেট করেন। ভিসা অন্য যায়গা থেকে করেন। সৌদি আরবে ওমরা ভিসা করার মত এজেন্সির অভাব নাই। ওমরা ভিসার ক্ষেত্রে অনেক সময় এয়ার টিকেটের কিছু ট্যাক্স ফেরত পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে আপনার টিকেটিং এজেন্সিকে অবশ্যই ওমরা ভিসার ব্যাপারটা জানাবেন আর ভিসা হয়ে গেলে ভিসার ডিজিটাল কপি পাঠায়ে দিবেন। ভিসা করতে যা যা লাগে:

  • সৌদি ভিসা বায়ো (Saudi visa bio) মোবাইল এপ ডাউনলোড করে পাসপোর্ট স্ক্যান করা লাগে, সেলফি আর হাতের ছবি তুলতে হয়। ইমেইলে একটা ইনরোলমেন্ট আইডি পাওয়া যায়। সেই ইমেইল পিডিএফ করে নিবেন।
  • গ্রে ব্যকগ্রাউন্ডে পাসপোর্ট সাইজের ছবির সফট কপি লাগে।বড় স্টুডিওতে গিয়ে বললেই হবে সৌদি ওমরা ভিসা।
  • পাসপোর্ট এর স্ক্যান কপি।
  • অনেক সময় বিবাহিত কাপলের ক্ষেত্রে ম্যারেজ সার্টিফিকেট চায়। তবে আমার ক্ষেত্রে চায়নি। স্ক্যান করে রেখে দিবেন। লাগলে লাগলো, না লাগলে নাই।

এই জিনিসগুলো এজেন্সিকে ইমেইল করতে হয়। মুল পাসপোর্ট জমা দিতে হয়না

আমাদের পার পার্সন (আমার মেয়ের জন্যও) ভিসা ফি লেগেছিলো ২২ হাজার টাকার মত। তবে এই ভিসার সাথে ট্রাভেল হেলথ ইনশুরেন্স থাকে এটা অনেকেই জানেনা। সৌদিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে গেলে এই ভিসা দেখালেই ইন্সুরেন্স সুবিধা পাবেন। ভিসা ইশু করতে ম্যাক্সিমাম পাচ ওয়ার্কিং ডে লাগে। ভিসা এপ্লিকেশন জমা দেয়া হয়ে গেলে নিজেই https://visa.mofa.gov.sa/ এখান থেকে ভিসা চেক/প্রিন্ট করতে পারবেন। তবে তারপরেও এজেন্সি থেকে একটা কপি নিবেন (এখান থেকে প্রিন্ট দিলে অনেক সময় লেটারহেড প্রিন্ট হয়না)।

কারেন্সি:

সৌদি আরবের ক্ষেত্রে আমি যেটা দেখছি সেটা হচ্ছে আপনার যদি ইনটারন্যাশনাল কার্ড থাকে সেটার এক্সচেঞ্জ রেট ক্যাশ ডলারের থেকে ভালো। তবে সৌদি আরবে আমেরিকান এক্সপ্রেস বেশীভাগ যায়গায় একসেপ্ট করেনা, এটা মাথায় রাইখেন। ভিসা আর মাস্টারকারর্ড চমতকার কাজ করে। বাকিটা আপনার প্রিফারেন্স। এয়ারপোর্টে আমার তেমন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ চোখে পড়েনি। যা আছে হারাম শরীফের কাছে আছে ক্লক টাওয়ারের দিকে। বাইর থেকে এত মানুষ আসে এখানে সেই তুলনায় আমার কারেন্সি এক্সচেঞ্জ অপ্রতুল মনে হইছে। সাথে কিছু সৌদি রিয়েল নিয়ে যেতে পারেন। আমি অবশ্য বেশীভাগ খরচ করেছি কার্ড থেকে । সৌদিতে প্রায় সব যায়গাতেই কার্ড একসেপ্ট করে (এমনকি ভিখারীরাও)। আর এদের সব মেশিন এন এফ সি কন্টাকলেস মেশিন। আমার কার্ড পুরানো তাই এন এফ সি ছিলোনা, কাজ করেছে ঠিকই কিন্তু প্রত্যেকবার আমাকে বলে দিতে হয়েছে আমার কার্ডে ট্যাপ টু পে অপশন নাই। আগে জানলে কার্ড রিপ্লেস করে নতুন কার্ড নিয়ে যেতাম।

যারা যাচ্ছেন অন্তত গ্রুপের একজনের হলেও পাসপোর্টে ডলার ইনডোর্সমেন্ট নিয়ে যাবেন। আমাকে কারেন্সি এক্সচেঞ্জ বলেছে লাগবে না। তবে এটাই আইন।

হোটেল:

হোটেল বুক করেছিলাম বুকিং ডটকম থেকে। অনেক সময় এগোডা তে বেশী ছাড়ে পাওয়া যায় হোটেল। সেক্ষেত্রে ক্রস চেক করে ভালো ডিল টা নেয়া ভালো। হারাম শরীফের যত কাছে হোটেল তত বেশী দাম, সেটার কোয়ালিটি যেমনই হোক না কেন। আর হারাম শরীফের কাছে নেয়ার ক্ষেত্রেও একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, সেটা হচ্ছে এলিভেশন। অনেক হোটেল আছে হারাম শরীফের ৬০০-৭০০ মিটারের ভিতরে, কিন্তু এই ৬০০-৭০০ মিটার রাস্তা পুরাটা পাহারে উঠতে হবে। আর কাছের হোটেলে থাকাটা আমার কাছে তেমন জরুরী মনে হয়নি। ট্রান্সপোর্ট ভালো এমনিতেই। কাছে থাকলে উল্টা অনেক বেশী খরচ। এক্ষেত্রে ম্যাপ আর ম্যাপের স্যাটেলাইট ভিউ আপনার বন্ধু।

আমি যেই হোটেলে ছিলাম সেটার নাম আল কিসওয়া টাওয়ার্স। হারাম শরীফে হোটেল থেকে হেটে যেতে লাগতো সাত আট মিনিট। হেটেল এইটা বেশ ভালো কিন্তু প্রচন্ড এক্সপেনসিভ। এরা বুকিং ডট কম এক্সক্লুসিভ হওয়ায় অনেক প্রেশারের সময়ও হোটেলে রুম পেয়েছিলাম।

প্যাকিং:

বেশীভাগ যায়গায় ট্রাভেল করার সময় আমার এটিটিউড থাকে যেটা ঐখানে সস্তায় পাওয়া যায় সেটা ব্যাগে করে নিয়ে যাবো না। কিন্তু সৌদিআরব এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ডিফারেন্ট। খুজলে হয়ত সবই কিনতে পাওয়া যাবে, কিন্তু সবকিছুর দাম অনেক বেশী। তাই যেটা আপনি নিশ্চিত লাগবেই, সেটা সাথে করে নিয়ে যাওয়াটা ভালো।

আমি একটা জেনারেল প্যাকিং লিস্ট দিচ্ছি, যেটা আমি যাওয়ার আগে করেছিলাম। লিস্টের সবকিছুই কমবেশী কাজে লেগে গেছে। একেবারে পার্সোনাল জিনিস এখানে উল্লেখ করা নাই:

  • পাসপোর্ট
  • পাসপোর্ট, ভিসা, টিকেটে আর হোটেল বুকিং এর অন্তত তিন কপি ফটোকপি
  • কলম, ছোট নোটবুক
  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (আমার দরকার হয়নি, তাও সাথে থাকা ভালো)
  • কোভিড ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট (আমার দেখাতে হয়নি তবে সাথে নিবেন অবশ্যই)
  • ইহরামের কাপড় (অন্তত দুই সেট, মোটা কাপড়ের টা কিনবেন অবশ্যই)
  • ভালো মানের সানগ্লাস (আমার শালার স্টোর গ্লাস-অন এ দেখতে পারেন)
  • ক্যাপ (আমার শালার স্টোর ক্যাপ-অন এ দেখতে পারেন)
  • ছোট সাইড ব্যাগ (সবসময় পাসপোর্ট আর ভিসার একটা কপি সাথে রাখবেন)
  • টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, ফ্লস
  • ভালো মানের স্যান্ডেল (ইহরামের ড্রেস কোড, প্লাস প্রচুর হাটতে হয়, অবশ্যই ভালো মানের আরামদায়ক স্যন্ডেল নিবেন)
  • টাওয়েল বা গামছা (এটা হয়ত হোটেলে দিবে, পার্সোনাল হাইজিনের খাতিরে নিতে পারেন)
  • নেইল কাটার
  • ছোট কাচি বা ট্রিমার (অবশ্যই চেক-ইন লাগেজে নিবেন)
  • ছাতা
  • জুতা রাখার ব্যাগ
  • সানস্ক্রিন (অন্তত SPF 50)
  • রেগুলার মেডিসিন (অন্তত জ্বর ঠান্ডার ঔষধ অবশ্যই নিবেন)
  • পেইন কিলার স্প্রে (মুভ টাইপের কিছু)
  • ওরস্যালাইন
  • ফ্লেভার বিহীন পোট্রোলিয়াম জেলি (ভ্যাসলিন এর একটা ছোট কৌটা কিনে নিবেন সবসময় সাথে রাখার জন্য)
  • সুগন্ধ ছাড়া সাবান বা লিকুইড সাবান। (দারাজ লিংক:  Mollywaiz অথবা Hajj Soap)
  • সুগন্ধ বিহীন টিশু পেপার (দারাজ লিংক: Planet Tissue)
  • ফেস মাস্ক
  • পাওয়ার ব্যাংক
  • ট্রাভেল এডাপটার
  • চা, কফি

মোবাইল এপ যেগুলা ডাউনলোড করে নিয়ে যাবেন:

  • Nusuk (মদিনায় রওদায় নামাজ পড়ার পার্মিশন এর জন্য)
  • Careem (উবার এর মত)
  • গুগল ম্যপে মক্কা, মদিনার অফলাইন ম্যাপ
  • গুগল ট্রান্সলেটে ইংরেজী আর এরাবিক ভাষার অফলাইন ট্রান্সলেশন


মক্কার আবহাওয়া বেশ আন প্রেডিক্টেবল। সাধারনত বেশীভাগ দিন ভর দুপুরে বাইরে বের হলে রোদে পুড়ে সাইজ হয়ে যাবেন। ইনডোরে কনকনে ঠান্ডা করে রাখে এসি দিয়ে। স্পেশালি হারাম শরীফে সাফা-মারওয়ার মাঝের যায়গাটা। আর রাতে বাইরের টেমপারেচার বেশ কমে যায়।

তবে আমরা যেদিন গিয়েছিলাম তার পরের দিন থেকেই ঠান্ডা বাতাস শুরু হয়েছিলো। দিনের বেলায়ও ছায়ার মধ্যে ঠান্ডা লাগতো, রাতে তো পুরা মাথা নস্ট ঠান্ডা। আমাদের দোকান থেকে শীতের কাপড় কিনতে হয়েছে এতটা ঠান্ডা ছিলো। আর আবহাওয়া প্রচন্ড ড্রাই। ঠোট, পায়ের পাতা সব ফেটে যায়। এইজন্য ভ্যাজলিন পকেটে নিয়ে ঘুরতে হয়।

যাত্রা:

এয়ারপোর্টের জন্য একটু হাতে সময় নিয়ে বের হবেন। রাস্তায় আর এয়ারপোর্টের গেটের সামনে অনেক টাইম লাগে। সাধারনত ওমরা ভিসা থাকলে ইমিগ্রেশনে তেমন সময় লাগেনা। অন্তত আমাদের সময় লাগেনি। আপনি চাইলে ইহরামের কাপড় বাসা থেকে পড়ে যেতে পারেন। তবে ঢাকা টু জেদ্দা প্রায় সাড়ে সাত ঘন্টার জার্নি। এতক্ষন অনেকেই ইহরাম পড়ে বসে থাকতে পারেনা। আমি যেটা করেছিলাম, আমার কেবিন ক্যারি ব্যকপ্যাকে এক সেট ইহরাম একটা পরিস্কার পলিব্যাগে নিয়ে নিয়েছিলাম। প্লেন মিকাত (যেখান থেকে ইহরামের কাপড় পড়ে ওমরার নিয়ত করতে হয়) পার হওয়ার সময় এনাউন্স করে। মীকাতের কাছাকাছি যাওয়ার সময়ও এনাউন্স করে। সেই সময় প্লেনে ইহরামের কাপড় পড়ে ফেলা যায়। তবে সেটার জন্য কয়েকবার প্রাকটিস করে যাবেন বাসা থেকে। প্লাস পারলে বাসায় ইহরাম পড়ে কয়েকবার নামাজ পড়বেন। তাহলে ইহরাম এর সাথে কমফোর্টেবল হয়ে যাবেন। নাহলে পড়তে আর সামলাতে সমস্যা হতে পারে।

সৌদি আরব এয়ারলাইন্সে নামাজ পড়ার আলাদা যায়গা আছে, সেখানে গিয়ে ইহরাম পড়া যায়। অন্য এয়ারলাইনে হয়ত ওয়াশরুমে গিয়ে পড়তে হবে। আর যদি ইহরাম পড়ে না উঠেন প্লেনে, এমন প্যান্ট পড়বেন যেটা বেল্টা ছাড়া ঢিলা হয়ে পড়ে যায়না, সহজে খোলা যায় এমন জুতা পড়বেন (চেকিং এর সময় আসলেই এটার জন্য আমাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিবেন)।

ল্যন্ড করা, হোটেলে যাওয়া, সিম কার্ড কেনা:

ল্যন্ড করার পর ইমিগ্রেশন। আমাদের সৌদি ইমিগ্রেশন অফিসার লোকটা খুব বিনয়ী ছিলো। ইমিগ্রেশনে এপে দেয়া ফিংগারপ্রিন্ট মিলিয়ে দেখে আর ছবি তুলে। আপনার সাথে বয়স্ক কেও থাকলে আগে আপনি ইমিগ্রেশন পার করবেন, গিয়ে বলবেন আপনার সাথে কয়জন আছে, আপনি চাইলে দাড়িয়ে আপনার সাথের অন্যদেরও হেল্প করতে পারেন।

ইমিগ্রেশন পার করার পর লাগেজ নেয়া লাগে। জেদ্দার এয়ারপোর্টে লাগেজ সাধারনত খুব তারাতারি চলে আসে। যেই বেল্টে আসবে  তার সামনের স্ক্রিনে আপনার ফ্লাইট নাম্বর লিখা থাকবে। লাগেজ নিয়ে সামনে গেলেই দেখবেন অনেক ভলান্টিয়ার দাড়িয়ে আছে (গলায় আইডি কার্ড ঝুলানো থাকে)। জেদ্দা এয়ারপোর্ট থেকে ওমরা করতে আসা মানুষের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস আছে।  ইহরাম পড়া থাকলে তারাই আপনাকে গাইড করে বাসের কাছে নিয়ে যাবে। আপনাদের ভিসার কপি হাতে রাখবেন। ভিসা কনফার্ম করে বাসে করে নিয়ে যাবে।

বাসের যায়গাতেই সিম কার্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এটা নেয়ার জন্যও ভিসা দেখানো লাগে। আমরা ৩৫ রিয়েল দিয়ে Zain এর সিম কিনেছিলাম। ২ গিগাবাইট 5G ডাটা আর ২০০ মিনিট কল ছিলো। জেইন এর সার্ভিস ভালো লাগে নাই আর সারা মক্কায় আমি জেইন রিচার্জ করার কোন অপশন পাই নাই। এর পর গেলে হয়ত অন্য কোন অপারেটর নিবো।

হারাম শরীফের সামনের রাস্তাতেও ফ্রি সিম কার্ড দেয়। রিচার্জ করা লাগে। ঘুরে ফিরে সেইম পরিমান টাকাই লাগে।

হোটেলে পৌছে অবশ্যই মুরব্বিদের পকেটে হোটেলের একটা করে কার্ড দিয়ে দিবেন। যেন হারিয়ে গেলে কার্ডটা দেখাতে পারে।

চলাচল:

যাওয়ার আগে গুগল ম্যপে মক্কা আর মদিনা এরিয়ার অফলাইন ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখবেন। অবশ্যই আরবী ভাষা সহ ম্যপ টা ডাউনলোড করবেন। হাবিবীরা বেশীভাগই ইংরেজি বুঝে না। নাম বললেও বুঝেনা। এমনকি এরা ম্যপও বুঝেনা ভাষা ইংরেজী থাকলে। এমনকি বেশীভাগ হাবিবি হারাম শরীফ, আয়শা মসজিদ আর কয়টা হোটেল বাদ দিয়ে অন্য যায়গাগুলোও চিনেনা। তাই অবশ্য অবশ্যই অফলাইন ম্যাপ ডাউনলোড করে নিয়ে যাবেন। ম্যাপ থাকলে যেকোন যায়গায় যেতে পারবেন সহজেই।

অনেক হোটেলের ফ্রি বাস সার্ভিস আছে হারাম শরীফ পর্যন্ত। আপনার হোটেলে না থাকলে আশেপাশের হোটেলের বাসেও যেতে পারবেন সমস্যা নাই। আর মক্কায় সরকারী ভাবেও ফ্রি বাস আছে সেগুলোতেও যেতে পারবেন। আর বাজেট থাকলে গাড়িতে যেতে পারবেন। রাস্তায় দাড়ালেই দেখবেন গাড়ির অভাব নাই। গাড়ি নিলে অবশ্যই ম্যপে আপনার লোকেশন বের করে একবার চালককে দেখায়ে নিবেন, আমি ধরা খেয়ে শিখছি বিষয়টা।

রাস্তা থেকে নেয়া গাড়ির ক্ষেত্রে সস্তা আর সেফ হচ্ছে কারিম (Careem) মোবাইল এপ। তবে অনেক সময় এপে গাড়ি পাওয়া যায়না।

হারাম শরীফ চব্বিশ ঘন্টা খোলা ঘাকে। আর মক্কা রাতে জেগে উঠে। বেশীভাগ দোকান রাত ১টা বা ৩ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর বাকীগুলা ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে। আমরা প্রথম ওমরা বাদ দিয়ে বাকী সবগুলা ওমরা মাঝরাতে গিয়ে করে আসছি। ভীড় কম থাকে। আর ওমরা শেষ করতে করতে ফজরের আজান দিয়ে দেয়, তখন ফজর পড়ে ওমরা শেষ করে আসি।

মদিনা যেতে চাাইলে:

ভাষা ও মানুষের সাথে কমিউনিকেট করা:

সৌদি হাবিবীদের মধ্যে ইংরেজি জানে এমন মানুষ খুবই কম। এমনকি টয়লেট শব্দটার মানেও জানেনা। যারা ইংরেজী জানে তারা আবার শুদ্ধ ইংরেজী বুঝেনা। আমি প্রথমদিন শুদ্ধ ইংরেজী বলে ট্রাই করে দেখছি। যাই হোক, যারা ইংরেজী বুঝে তারা বুঝে ভাংগা ইংলিশ। সুতরাং আপনার আমেরিকান একসেন্টে “I am hungry where can I get some food?” না বলে বলবেন “eating?”।

তবে সস্তির বিষয় হচ্ছে, যেদিকে তাকাবেন, দেখবেন কোন না কোন দেশী ভাইয়ের চেহারা দেখা যাচ্ছে। দেশী না হলেও পাকিস্তানি পাবেন। এদের সাথে কমিউনিকেট করা সহজ। আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, আমি যেখানেই গেছি, দেশী ভাই পেয়ে গেছি। এরা এক চিপায় কেন যেন লুকায়ে থাকে। সহজে কাছে আসতে চায়না। তবে একবার কথা বললে দেখবেন তাদের মত আন্তরিক মানুষ হয়ত দেশের বুকেও দেখেন নাই।

যাওয়ার সময় দেশ থেকেই ট্রান্সলেটের অফলাইন ডাটা নামায়ে নিয়ে যাবেন। ইংরেজী আর আরবী ভাষারটা হলেই হবে। আর দেখবেন ক্যামেরা ট্রান্সলেশন আর ভয়েজ ট্রান্সলেশন আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু।

দুই চারটা আরবী শব্দ শিখে যাওয়া আরো বেটার। আমি একটা শিখায়ে দেই, “হাম্মাম”, মানে ওয়াশরুম। আর “হাল্লা” মানে হেয়ারকাট।

অনেকেই উর্দু পারে, এমনকি হাবিবিরাও। কিন্তু আমি কারো সাথে উর্দুতে কথা বলি নাই। বলতে ইচ্ছা করে নাই।

খাওয়া:

মক্কায় খাওয়ার যায়গার অভাব নাই। ভালো যায়গারও অভাব নাই। যেই শুনবে আপনি মক্কা গেছেন জিগ্গেস করবে আলবাইকে খেয়েছেন কিনা। আলবাইকে সাধারনত বেশ ভীড় থাকে আর বেশীভাগ আলবাইক টেকএওয়ে দেশ শুধু। আলবাইকের নাগেট ভালো লাগছে। চিকেন দেশের বিএফসসি ই ভালো। তবে একবার আলবাইক অন্তত খাইয়েন। অন্তত ফোমো এভয়েড করার জন্য।

আমি যেই দশদিন ছিলাম, দশদিনই প্রায় এক্সক্লুসিভলি মিল টাইপের খাবার খেয়েছি ইস্কান্দার কাবাবে (বেশ পপুলার তুর্কিশ রেস্টুরেন্ট)। এদের তুর্কিশ কাবাব চমতকার। আমরা একটা ১৪৫ রিয়েলের প্লাটার নিতাম, আমাদের ছয়জনের পেট ভরে খাওয়া হয়ে যেত। চিপ না তেমন। কিন্তু টেস্টি আর আরামদায়ক খাবার। আপনি ইস্কান্দার কাবাবে গেলে গিয়ে ফারুক ভাইকে চাইবেন। ফারুক ভাইয়ের বাড়ি চট্রগ্রাম। খুব ভালো মানুষ। আমাদের নিজের আত্বীয়ের মত যত্ন করে সার্ভ করেছেন। আর ফারুক ভাইকে পেলে আমার পক্ষ থেকে একটা সালাম দিবেন। তুর্কিশ সব রেস্টুরেন্টে ফ্রি তুর্কিশ কফি দেয়

উটের মাংস খাওয়ার ইচ্ছা ছিলো। খাবসা হাসি নামে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। আজিজিয়া আলবাইকের কাছেই। এদের উটের বিরিয়ানি খুবই টেস্টি। ৫৫ রিয়েলে একটা প্লেট নিলে তিন চারজন পেট ভরে খাওয়া যায়। আর এদের কোন টেবিল চেয়ার নাই। ট্রেডিশনাল এরাবিক স্টাইলে ফ্লোরে বসে খেতে হয়। এখানে গেলে সুমন ভাইকে পাবেন (যেখানেই যাবেন দেখবেন দুই চারজন বাংগালি আছে)।

আর মাথায় উঠছিলো স্টেক খাবো।ুরকান সাফ রেস্টুরেন্ট এ গিয়েছিলাম। এটা আবার বারোটায় বন্ধ হয়ে যায়। এখানকার স্টেক চমতকার। দাম প্রচন্ড রকম বেশী। দামটা নাহয় না লিখলাম।

এই সব রেস্টুরেন্টের খোজ দিয়েছে নওশাদ ভাই। উনাকে অনেক জ্বালাইছি। তবে আমি যেসব রেস্টুরেন্টে গিয়েছি সেগুলো বেশী খরচের রেস্টুরেন্টের মধ্যে। মেইনলি আমি খাবার নিয়ে কোথাও গেলে রিস্ক নেই না। স্পেশালি সাথে যেহেতু বয়স্ক মানুষ ছিলো। এগুলে ছাড়াও আল সাফওয়া টাওয়ারের চার তলায় ফুডকোর্ট আছে, হারাম শরীফের আশেপাশে (স্পেশালি ক্লক টাওয়ারের ডান পাশের গলি দিয়ে সোজা গেলে) বাংলা খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। সেই যায়গাগুলোতে খাবার বেশ সস্তা। ১৫-২০ রিয়েলে এক বেলার খাবার ইজিলি হয়ে যাবে। আমি ফুডকোর্টে নাস্তা করেছি মাঝে মাঝেই। আর সৌদির খাবারের দাম বেশী হলেও পোর্শন অনেক বেশী। মানে সৌদির মানুষদের মেটাবলিজম ভালো। একজনের জন্য যে পরিমান খাবার দেয় সেটা দিয়ে দুইজন পেট ভরে খাওয়া যায়।

আর আপনি যদি খাবারের জন্য কোন টাকা খরচ করতেই না চান। হারাম শরীফের বারান্দায় প্রায় সবসময় কেও না কেও খাবার দিয়ে যায়। প্রতি বেলায় বড় করে ফ্রি খাবারের আয়োজন করে মক্কার বেশ কয়েকটা প্লেসে। তাদের উদ্দেশ্য কিছু সওয়াবের আশায় আল্লাহর অতিথিদের এক বেলা খাওয়ানো। আমার অনেক ইচ্ছা ছিলো এরকম মজলিসে গিয়ে এক বেলা খাওয়ার, সময় আর সুযোগ হয়ে উঠেনি।

সৌদি আরবে ফান্টার একটা এক্সক্লুসিভ ফ্লেভার পাওয়া যায়, সিট্রাস ফ্লেভার। আমরা যখনই কোল্ড ড্রিংকস খেয়েছি এটাই খেয়েছি। সাথে দোকানে লাবান খুব কমন আইটেম। আলমারাই এর লাবান বেশ টেস্টি।

আর যেটাই করেন, অরেঞ্জ জুস খাইয়েন না। সৌদি সরকারের স্ট্রিক্ট গাইডলাইন আছে কোন জিনিসকে জুস বলা যাবে আর কোন জিনিসকে জুস বলা যাবেনা। আর ফ্রুট জুসের ক্ষেত্রে পানি বা চিনি দিলে জরিমানা। সেটা দোকানের প্যকেটজাত জুস হোক আর জুসের দোকানের জুস হোক। আর চিনি ছাড়া অরেঞ্জ জুস তিতা প্রায়। আপেল জুস মজা আছে। আবার জুসের দোকানে মিক্সড ফ্রুট জুস পাওয়া যায়, সেইটা বেশ মজা।

আরেকটা জিনিস, সফট আইসক্রিমের অনেক দোকান আছে, আইসক্রিম মজা তবে চকলেট ফ্লেভার এভয়েড করবেন। এদের বেশীভাগ চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিমে চকলেট এর কালার জিহবায় লেগে যায়। নাহলে লাল ঠোট আর চকলেট কালারের জিগবা নিয়ে ঘোরা লাগবে অনেকক্ষন।

সৌদির লোকাল কফিকে গাওয়া বলে। আমি এখনো বুঝি নাই এই জিনিস এরা এত মজা করে খায় কেমনে। হারাম শরীফের বারান্দায় বসলে প্রায় প্রতি ওয়াক্তের নামাজের পর (স্পেশালি মাগরিবের পর) অনেকেই ফ্রি গাওয়া খঅওয়ায়, খেতে চাইলে একটু খেয়াল করলেই পারবেন। ফ্রি তুর্কিশ কফি  গুলো মজা ছিলো। রাস্তায় একটু পর পর কফির দোকান পাবেন, কফি খাওয়ার কোন সমস্যা হয়নি মক্কায়।

জমজমের পানি খুবই তৃপ্তি লাগে খেতে। আপনার সাথে মুরব্বি থাকলে অবশ্যই বলবেন নন চিলড (ঠান্ডা না করা, লিখা থাকে) জমজমের পানি খেতে। ঠান্ডা পানি খাইলে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা অনেক বেশী। আপনি চাইলো দোকান থেকে পানি কালেক্ট করার বোতল কিনে সেই বোতল ভরে জমজমের পানি নিয়ে আসতে পারবেন হোটেলে খাওয়ার জন্য। আর রাস্তায় দেখবেন কেও না কেও সবসময় খাবার, বোতলজাত পানি বিলিয়ে দিচ্ছে। এই রকম জেনেরসিটি আমি এর আগে কোন দেশে দেখিনি।

চুল কাটা:

ওমরার রিচুয়াল শেষ করে চুল কেটে অথবা মাথা ন্যারা করে ওমরা শেষ করতে হয়। ওমরা করে বের হলেই ক্লক টাওয়ারের পাশের বিল্ডিং আল সাফওয়া টাওয়ারের বেজমেন্টে, তিন তলায় অনেক সেলুন আছে। আপনি ট্রিমার নিশে গেলে নিজেই কাটতে পারবেন অথবা সেই সেলুনগুলোতে যেতে পারবেন। প্রায় ১০০ ভাগ সেলুনই পাকিস্তানি দের। গড়ে ১০ থেকে ১৫ রিয়েল লাগে চুল কাটাতে

কেনাকাটা:

চকলেট বিস্কুট এইগুলা বা গ্রোসারি টাইপের কিছু কিনতে গেলে বিনদাউদ (BinDawood) সবয়েচে ভালো অপশন। আমি গিয়ে গিয়ে বিনদাউদেই পড়ে থাকতাম। প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই খোলা পাবেন বিনদাউদ। হারাম শরীফের কাছেই আছে একটা।

খেজুর,আতর, জায়নামাজ, জুব্বা বা এই টাইপের জিনিস কেনার জন্যও হারাম শরীফের কাছেই ক্লক টাওয়ারের পাশে আল সাফওয়া টাওয়ার আছে। সেখানের চার তলা মার্কেটেই সব পেয়ে যাবেন। দেশী মানুষের দেকানে সাধারনত দেশী দেখলে দাম কম রাখে। আবার দেখবেন আপনার হোটেলের আশেপাশেও প্রচুর দোকানপাট পাবেন এইগুলা কেনার।

লাক্সারি জিনিস কিনতে বা দেখতে চাইলে সয়ং ক্লক টাওয়ারে ঢুকতে পারেন। এই বিল্ডিং এ স্টারবাক্স ও আছে। অথবা রাস্তার অপজিটেই দারুস সালাম বিল্ডিং আছে (আলবাইক বললেই দেখায়ে দিবে)। আমি এইখান থেকে একটা ক্যাসিও ঘড়ি কিনছিলাম।

তবে ইহরাম রত অবস্থায় মার্কেটে না ঢুকাই ভালো। আতরের দোকানদাররা একটু বেশী ফ্রেন্ডলি এইখানে। আদর করে আতর ভরায়ে দিতে পারে গায়ে।

ঔষধ যদি একান্তই কিনতে হয় ফার্মেসি আছে অনেক। স্পেসিফিক কিছু খুজে না পেলে নাহদি ফার্মেসিতে খুজে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী।

জমজমের পানি হারাম শরীফ থেকে এমনিতেই নিয়ে আসতে পারবেন বোতল ভরে। শুধুমাত্র দেশে আসার সময় স্পেশাল বোতলে নিয়ে আসতে হয় (পাচ লিটারের বোতল কার্ডবোর্ডে বক্সে প্যাক করা থাকে ২০ রিয়েল দাম)। এই বোতল ছাড়া অন্য কোন বোতল ফ্লাইটে এলাউ করে না। আর এটা চেক ইন লাগেজেই দিতে হয়। আলাদা যায়গা আছে এয়ারপোর্টে জমজম পানি জমা দেয়ার। আর একটা বোর্ডিং পাসের (এয়ার টিকেটের) জন্য এক বোতলের বেশী জমজম পানি নিতে দেয় না।

বাচ্চা নিয়ে ওমরা করার জন্য এক্সট্রা যা করতে হয়েছে:

মক্কায় যাওয়ার সময় আমার মেয়ের বয়স ছিলো সাত মাস। জার্নির আগের দিন ওর ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম রুটিন চেকআপ করার জন্য। উনি বলেছেন বাচ্চা হেলদি আছে নিয়ে যাওয়া যাবে। সাথে উনি ঠান্ডার মেডিসিন লিখে দিয়েছিলেন আর কোন সিচুয়েশনে কি করতে হবে (ঠান্ডা লাগলে, ডিহাইড্রেশনে) বলে দিয়েছিলেন। আমরা ঔষধ গুলো দেশ থেকে নিয়ে গেছি কারন সৌদিতে ঔষধের দাম অনেক অনেক বেশী।

যাওয়ার আগে মেনিনজাইটিস আর ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম (প্রাইভেট ভ্যাকসিন)। আমার মেয়ে চার ঘন্টা পর পর খায় তাই দুইটা ফিডার রেডি করে নিয়ে গিয়েছিলাম। এমনিতে ফ্লাইটে লিকুইড নিতে না দিলেও বেবি বোতলের ক্ষেত্রে কিছু বলেনি। বাচ্চার ফরমুলা নিয়ে গিয়েছিলাম, সাথে সিরিয়ালও। সাথে কিছু বেবি ফুডের জার নিয়ে গিয়েছিলাম যেটা রেডিমেড পাওয়া যায়।

বাচ্চার রেগুলার মেডিসিনের পাশাপাশি, বাচ্চাদের সানস্ক্রিন, একটা এক্সট্রা ছাতা, সুডোক্রিম নিয়ে গিয়েছিলাম। এগুলোর দাম অবশ্য সৌদিতে কম। বাচ্চার ফরমুলাও কমবেশী সবই পাওয়া যায় সৌদিতে। লোকাল ফার্মেসিতে না পাওয়া গেলে বড় নাহদি ফার্মেসি আছে সেখানে পাওয়া যায়।

বাচ্চাটার জন্য তার মা, খালা দাদী মিলে ছোট হিজাব, সাদা সুন্দর ড্রেস তৈরী করে দিয়েছিলো। বাচ্চাকে কোলে নিয়েই দুইবার ওমরা করেছি। বেবী স্ট্রলার নেইনি। যদিও এয়ারলাইন স্ট্রলার ফ্রি চেকইন করতে দেয়। তবে একটা বেবি ক্যারিয়ার নিয়ে গিয়েছিলাম। সেটা অনেক কাজে এসেছে। হারাম শরীফে স্ট্রলার নিতে দেয়না এখন।

স্ক্যাম:

আমি আমার লাইফে যেই কয়টা শহরে ট্রাভেল করছি সবগুলোর মধ্যে মক্কা আমার কাছে সবচেয়ে বেশী সেফ মনে হয়েছে। রাত চারটার সময় একা একা মক্কার রাস্তায় হেটে হেটে এদিক ঐদিক গেছি একফোটা অসস্তি লাগেনি। আমার ওয়াইফ একা একা ঘুরে বেরিয়েছে শপিং করার জন্য আমার এক ফোটাও টেনশন হয়নি কখনো। মাশাআল্লাহ। এইখানে ছিনতাই, ইভটিজিং এইগুলা নাই। চুরির টেনশনও করেনা কোও কোনকিছু নিয়ে কারন চুরির পানিশমেন্ট ভয়াবহ। তবে যেইটা আছে সেটা হার্মলেস স্ক্যাম। স্ক্রিপ্ট সিম্পল, “লাগেজ হারায়ে গেছে, এখন খাওয়া দাওয়া, যাওয়ার টাকাটুকা নাই।” প্রতিদিন অন্তত দুইটা করে পাইছি এই জিনিস। তেমন সমস্যা হয়নি যদিও। সরি দিতে পারবো না বললে চলে যাবে। তবে এই এক গ্রুপ থেকে সাবধান থাকা ভালো। ইন ফ্যাক্ট হারাম শরীফে ওমরা করার টাইমেও ইহরাম পড়া এদের দেখা পাইছি বেশ কয়বার।

আরো অনেক কিছু আছে যেটা মনে পড়ছে না। মনে পড়লে এড করে দিবো।